অনশন তুলে নিলেন বকেয়া ডিএ আন্দোলনকারীরা, এবার তাহলে কি করবেন? কোন কৌশল নেবে যৌথ মঞ্চ?
কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance) এর দাবি না মেটা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ। কিন্তু সেখান থেকে এবার একধাপ পিছু হঠলেন তারা। লাগাতার যে অনশন কর্মসূচির (Hunger Strike) ঘোষণা করা হয়েছিল বিক্ষোভ মঞ্চে, সেই বকেয়া ডিএ অনশন কর্মসূচি এবার প্রত্যাহার করে নিলেন। ৪৪ দিন পরে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে এই অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো। গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বকেয়া ডিএ এর দাবিতে কলকাতার শহীদ মিনার চত্বরে বিক্ষোভ মঞ্চে তারা রিলে অনশন শুরু করেন। পরবর্তীতে ১০ই ফেব্রুয়ারি থেকে একেবারে লাগাতার অনশনের ডাক দেন। দাবি না মেটা পর্যন্ত লড়াই চলবে বলে ঘোষণা করার পরেও ৪৪ দিনের মাথায় সেই অনশন কর্মসূচি তারা সরে এলেন।
কেন অনশন তুলে নিলেন?
তার কারণ হিসেবে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, বহু সরকারি আধিকারিক, কর্মচারী এই লাগাতার অনশন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কারো কিডনিতে সমস্যা হচ্ছে, কারো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হচ্ছে, কারোর শারীরিক অন্যান্য অসুবিধা বাড়ছে, আর ঠিক এই কারণেই সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলেই ৪৪ দিনের মাথায় বকেয়া ডিএ এর দাবিতে লাগাতার অনশন প্রত্যাহার করা হলো। তবে অনশন তুলে নিলেও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে বকেয়া ডিএ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সেখানে শুনানি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত শুনানি হয়নি। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ মেটানোর দাবিতে কলকাতার শহীদ মিনার চত্বরে বিক্ষোভ ধর্না চালিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। রাজ্য সরকারকে চাপে ফেলার এই কৌশল তারা নিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
তার কারণ, কখনো বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী, কখনো আই এস এফ (ISF) এর নওশাদ সিদ্দিকী, কখনো সিপিআইএমের নেতারা তাদের DA মঞ্চে গিয়ে জোরালো ভাষায় রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের পরিকাঠামো সম্পূর্ণ আলাদা। সুতরাং বেতনক্রম সম্পূর্ণ আলাদা। তাই রাজ্য সরকারের চাকরি করে কেন্দ্রের হারে বকেয়া ডিএ এর দাবি করা অযৌক্তিক। আর সেই হারে DA রাজ্য সরকার দেবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর সেখান থেকেই যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের সদস্যরা বুঝতে পেরেছেন, এই ধরনের আন্দোলনে আর কাজ হচ্ছে না। তাই এবার তারা আগামী রবিবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মূকে গণ মেইল করবেন বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তারা গণ মেইল করবেন। এর আগে একদিনের যে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল যৌথ মঞ্চের তরফে, সেই ধর্মঘটের দিন যে সমস্ত সরকারি কর্মচারী, শিক্ষকরা অনুপস্থিত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে শোকজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরে ইতিমধ্যেই বেতন কাটার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
পরিবারে কন্যাসন্তান থাকলেই SBI দেবে 15 লক্ষ টাকা, কিভাবে এই সুবিধা নিতে হবে?
এই শোকজ লেটার পাঠানোর আগেই অর্থ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগেই সতরকাও করেছিলো প্রশাসন। আর সেটা অমান্য করায় এবার কড়া পদক্ষেপ নিলো নবান্ন। এবার সেই পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। বকেয়া ডিএ আন্দোলনের মাঝেই, রাজ্য বাজেটে ৩ শতাংশ DA ঘোষণা করা হয়। মার্চ মাস থেকে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা মোট ৬ শতাংশ DA পাচ্ছেন। কিন্তু তাতেও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ খুশি হতে পারেন নি। তারা কেন্দ্রীয় হারেই DA আবদার করছেন। আর সেই কারণেই লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এবার যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে আগামী ৩০ মার্চ হাওড়া এবং শিয়ালদহ থেকে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। ওই দিন শহীদ মিনারেও তারা সভা করবেন বলে জানা গিয়েছে। তারপরে ১০ এবং ১১ ই মার্চ ২ দিন দিল্লির যন্তর মন্তরে অবস্থান করবেন DA আন্দোলনকারীরা। অনশন প্রত্যাহার করার পরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে যৌথ মঞ্চের তরফে। এখন দেখার বিষয়, আগামী দিনে এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরেও তাদের দাবি আদায়ে আদৌ তারা সফল হন কিনা।
Written by Rajib Ghosh.