রাজ্যের যুক্তিতে রোপা 2009 অনুসারে কোন বকেয়া ডিএ নেই। জানুন বিস্তারিত।
বকেয়া ডিএ ঘোষণা নিয়ে যতটা না আগ্রহ, তারচেয়ে ডিএ যাতে না দিতে হয়, সেই ব্যাপারে আগ্রহ বা ইচ্ছা দেখা যাচ্ছে নবান্নের। অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্য আমলারা যারা নিয়মিত AICPI হারে ডিএ পাচ্ছেন, রাজ্য সরকারী কর্মীদের ডিএ যাতে না দেওয়া যায়, তাঁরাই সেই ব্যাপারে আইনি দিক গুলো হন্যে হয়ে খুজছেন। এর চেয়ে উপহাস বা দুঃখের আর কি হতে পারে, আক্ষেপ খোদ রাজ্য সরকারী কর্মীদের।
১৯শে মে হাইকোর্টের মহান রায় ঘোষণা হয়েছিল যাতে তখন বেশ আনন্দেই ছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। মাত্র ৯০ দিন সময়ের মধ্যেই তাদের মিলে যাবে সমস্ত বকেয়া ডিএ। কিন্তু তা তো মেলেই নি বরং তা নিয়ে আবার হয়ে গিয়েছে একাধিক মামলা। সুপ্রিম কোর্টে যাবার সুযোগ থাকলেও যান নি তারা।
এই বকেয়া ডিএ এর অবমাননার মামলায় আবার নতুন করে বেঞ্চ করা করার পর তার শুনানি হবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট। উক্ত নির্দেশ অনুযায়ী বলা হয়েছে, এই আদালত অবমাননার মামলার শুনানি হবে আলাদা করে। তৈরী হবে আলাদা বেঞ্চ। সেই অনুসারে গতকাল মামলাটি উঠলেও তার আবার ৮ ও ৯ই সেপ্টেম্বরে তারিখ পড়ে।
এই বেঞ্চ শুধুমাত্র কনটেম্পট মামলার শুনানীর জন্যই। এতদিন শুধুমাত্র মামলাগুলি ফাইল করার কাজই হয়েছে। তারা আশাবাদী যে এবারে দ্রুত এই কনটেম্পট মামলার শুনানি হয়ে যাবে। গতকাল বিচারপতিদ্বয় মাননীয় হরিশ ট্যান্ডোন এবং মাননীয় রবীন্দ্র নাথ সামন্ত জানান যে, এই রাজ্য সরকার যে রিভিউ পিটিশন এর মামলা করেছেন, তার তেমন কোনো গুরুত্বই নেই।
গতকাল আবার এই মামলা ওঠে হাইকোর্টে। দুপুর 2 টায় সকলেই এজলাসে উপস্থিত হন। সরকার পক্ষের তরফ থেকে প্রথমে তাদের বক্তব্য পেশ করা হয়। আসুন জেনে নেই তাদের বক্তব্য। রাজ্য অবশেষে মেনে নিয়েছে যে, “মহার্ঘ্য ভাতা সরকারি কর্মীদের ন্যায় সঙ্গত অধিকার”। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্য নতুন এক যুক্তি তুলে ধরল।
কি সেই যুক্তি? রাজ্যের বিরুদ্ধে বকেয়া মহার্ঘভাতা না মেটানোর অভিযোগ ওঠে। এর প্রেক্ষিতে রাজ্যের যুক্তি হল, রোপা (ROPA 2009) এর নিয়মানুযায়ী সরকারি কর্মীদের আর কোনো বকেয়া নেই। সব DA মিটিয়ের দেওয়া হয়েছে। তবে রাজ্যের AG জানান, কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রের হারে DA দিতে বলেছেন। এই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছেন তারা।
আদালত এই রায় পুনর্বিবেচনার বিষয়ে জানিয়ে দেন, রায় দেওয়া হয়ে গেছে। এখানে আর কোন পুনর্বিবেচনার জায়গা নেই। রাজ্যের AG সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ্য ভাতা বকেয়া নেই। 2009 সালের রোপা রুল অনুসারে 16% হরেই Dearness Allowance পাবার কথা রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের। যার পুরোটাই ইতিমধ্যে মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের বক্তব্য, “DA সরকারি কর্মীদের ন্যায় সঙ্গত অধিকার। তবে রোপা রুল অনুযায়ী ঐ 16% DA ই ন্যায় সঙ্গত বলে মনে করছে রাজ্য।” এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হন নি ডিভীশন বেঞ্চ। বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্ত বলেন, “AICPI অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের DA দেবার কথা। ডিভিশন বেঞ্চ তার রায়ে এই সমস্ত বিষয়ই নজরে রেখেছে। তার পরও রাজ্যের পুনর্বিবেচনার আবেদন আদৌ গ্রহণযোগ্য হতে পারে?” বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এর বক্তব্য, “রায় নিয়ে রাজ্যের আপত্তি থাকলে আরও উচ্চ ফোরামে যেতে পারত। কিন্তু তা ঘটে নি।”
গতকাল 8ই সেপ্টেম্বর শুধুমাত্র রাজ্যই তার বক্তব্য রাখে। আজ 9ই সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনগুলি তাদের বক্তব্য তুলে ধরলেন। আর তার মধ্য দিয়েই রিভিউ পিটিশনের শুনানি শেষ হল। রায় দেবে রিজার্ভ বেঞ্চ। তবে রিভিউ পিটিশন যে খারিজ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছেন বিচারপতি।
এবার হয়তো রাজ্যকে বকেয়া ডিএ মেটানোর আরও কিছুটা সময় দিতে পারে। আপডেট আসছে। সরকার যদি এর পরেও সুপ্রিম কোর্টে যেতে চায় সেক্ষেত্রেও তারা অর্থাৎ সরকারি কর্মচারিরা। এমন আরো আপডেট পেতে আমাদের সাথে থাকার একান্ত অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ।
Written by Mukta Barai.