WB DA নিয়ে আদৌ কিছু ভাবছে সরকার?
রাজ্যের নাকি টাকা নেই, 258 কোটি অনুদান, WB DA নিয়ে উপেক্ষা আদালতের নির্দেশ, কি জানালেন এদিন ঘোষণায়? ডিএ নিয়ে এত জল্পনা, মামলার পরও ডিএ দেওয়া নিয়ে আদৌ কি কিছু ভাবছে সরকার? জানুন বিস্তারিত।
6 লক্ষ কোটির বিশাল ঋণের বোঝা মাথায় দাঁড়িয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গ। করেনাকালীন পরিস্থিতিতে রাজ্য বা দেশ নয়। গোটা পৃথিবীতেই যেন থমকে গেছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। কিছু দেশের পরিস্থিতিও ভয়ঙ্কর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আমাদের পার্শ্ববর্তী পাকিস্তান, শ্রীলংকা আর বাংলাদেশ। সেটি উপেক্ষা করেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বদাই রাজ্যের মেলা, খেলা বা উৎসব কোনোটাকেই কম গুরুত্ব দেন না, অভিযোগ বিরোধী হেকে সংবাদমাধ্যম, সরকারী কর্মী থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
একি সমস্যার জন্য সমাধান নাকি সমাধানের পথে এক বিরাট সমস্যা? প্রশ্ন অধিকাংশ রাজ্যবাসীরই।
বাঙালির বার্ষিক মহানন্দের এক ও অদ্বিতীয় উৎসব হলো দুর্গোৎসব যেখানে যুগ যুগ ধরে বাঙালি শক্তির আরাধনায় মেতে ওঠে। এই পূজার্চনার শুভারম্ভ হয়ে যায় মহালয়ার সূচনা থেকেই আর শেষ হয় দশমীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।
সারা বাংলায় বর্তমানে পুজো প্যান্ডেলের সংখ্যাও এখন বেড়েই চলেছে কারণ বর্তমানে এই বাংলায় পুজো হলেই অনুদান নিজেকে রাজ্য সরকারের থেকে মেলে মোটা টাকা। এবারেও কি মিলবে? আসুন জেনে নেই।
একদিকে রাজ্যের বেহাল দশা। তাই রাজ্যের মুখে প্রায়শই শোনা যায় টাকা না থাকার আকুতি বিশেষ করে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ দেবার বিষয়ে। আবার অন্যদিকে রাজ্যে প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি। তাহলে কি এবারে দুর্গাপুজোতে আগের বারের মতো প্যান্ডেল প্রতি মিলবে ৫০ হাজার? পাওয়া যাবে কি অনুদান?
নেতাজি ইন্ডোরে আয়োজিত বৈঠকে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। এছাড়াও আরও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব। রাজ্যের মোট প্যান্ডেলের সংখ্যা ৪৩ হাজার। অর্থাৎ, পুজো কমিটিকে অনুদান বাবদ প্রায় খরচ হয় ২২০ কোটি টাকা। কিন্তু রাজ্য আদালতের রায়ের হিসেবে টাকার অভাবে বকেয়া ডিএ মেটাতে ব্যর্থ। তাহলে কি মিলবে অনুদান?
গত দু’বছরের মতো ৫০ হাজার টাকা? নাকি পরের বছর পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে তা বাড়ানো হবে? সোমবার বিকেলে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, এ বার ৪৩ হাজার পুজো কমিটিকে আগের বছর থেকে প্যান্ডেল পিছু ১০ হাজার করে বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে।
সেই যুক্ত তিনি জানান যে পুজোর আলোক সজ্জার জন্য ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিলেও মিলবে ছাড়। কলকাতা এবং রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদকে অনুরোধ করা হয়েছে, পুজো কমিটিগুলির বিদ্যুৎ বিলে যেন ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়।
মোট অনুদানের পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ২৬০ কোটিতে। অথচ মহার্ঘ ভাতা (WB DA) দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের নিমরাজি নিয়ে সমালোচনা চলছে রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলিতে। তাদের প্রশ্ন, তাহলে কি সত্যিই রাজ্যের টাকা নেই? নাকি (WB DA) এই টাকায় অন্য কিছু করে ভোটের রাস্তা ক্লিয়ার করা?
রাজ্য সরকার যে আবারও তাদের আর্থিক অনুদান দেবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিল পুজো কমিটিগুলি। কিন্তু সেই পরিমান যে একলাফে ২০% বৃদ্ধি পেয়ে অর্থাৎ ১০ হাজার করে বাড়বে, তা বিন্দুমাত্র বুঝতে পাননি কোনও প্রশাসনিক আধিকারিকও।
সোমবার নেতাজি ইন্ডোরের সভায় মুখ্যমন্ত্রী ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান ঘোষণা করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলি। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ৩১ শতাংশ ডিএ (WB DA) বকেয়া পড়ে রয়েছে। এ কারণে আগে থেকেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল সরকারি কর্মচারী মহলে। আর এই ঘোষণা যেন তাদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতোই যন্ত্রণাদায়ক।
সরকারি কর্মচারীদের বামপন্থী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটি আগামী ৩০শে আগস্ট দু’ঘন্টা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে কর্মবিরতি পালন করে প্রতিবাদ জানাবেন তাঁরা।
কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিজয়শঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘সরকার তো উৎসব, মোচ্ছব, ফূর্তি আর কার্নিভাল করেই যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই সিদ্ধান্ত সরকারি কর্মচারী-বিরোধী সিদ্ধান্ত বলেই আমরা মনে করছি। আজ থেকেই আমরা বড়সড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’
তৃণমূল সমর্থিত সরকারি কর্মচারী ইউনিয়ন এক নেতা মনোজ চক্রবর্তী। তিনিও সরকারি কর্মচারীদের দাবির পক্ষেই মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সরকা্রের প্রতিটি ইস্যুই সদর্থক। তবে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী হিসেবে সরকারের সিদ্ধান্ত বোধগম্য হচ্ছে না যে, কেন একটা গুরুত্বপূর্ণ দিককে (WB DA) সম্পূর্ণ ভাবে অনিচ্ছুকতায় মুড়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
এবার SBI এর গ্রাহকেরা বিনামূল্যে পাবেন এই ব্যাঙ্কিং পরিষেবা, বিশদে জানুন।
কারণ যে দলের সমর্থকই হন না কেন, দিনের শেষে তিনি অবশ্যই একজন সরকারি কর্মচারী। মনোজ চক্রবর্তী মহাশয় আরও বলেন, ‘‘যে সরকারি কর্মচারীদের হাত ধরে রাজ্যের উন্নয়ন হচ্ছে, তাঁদের বিষয়েও রাজ্য সরকারের (WB DA) ভাবা উচিত।’’
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ (WB DA) না দিয়ে পুজো কমিটিগুলিকে টাকা দেওয়া প্রসঙ্গে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘রোমান সাম্রাজ্য থেকে এখন পর্যন্ত স্বৈরতান্ত্রিকরা প্রজাদের আমোদ, নেশায় ডুবিয়ে রাখেন। এখানেও তাই হচ্ছে। এত লুঠ, এত বেকরি থেকে চোখ সরাতেই এই আয়োজন। সেই সঙ্গে ধর্মীয় উৎসবকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি। বাংলায় একটা ক্লাব সংস্কৃতি ছিল। সকলে স্বনির্ভর ছিল। সার্বজনীন পুজোকে সরকার-নির্ভর করে দেওয়ার চেষ্টা। এত খরচ করা হচ্ছে অথচ সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য ডিএ দেওয়া হচ্ছে না।’’
মহার্ঘ ভাতার প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য ডিএ (WB DA) নেই, রাজ্যে উন্নয়ন নেই। হাসপাতালে ওষুধ কেনার টাকা নেই। এই পরিস্থিতিতে ক্লাবকর্তারা এই অনুদান নিয়ে উদ্বাহু নৃত্য করলে বাড়ির লোকেরাই নিন্দা করবে। আর কোনও ক্লাব তৃণমূল সরকারকে জনরোষ থেকে রক্ষা করতে পারবে না।’’
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে ৩৪ শতাংশ হাতে ডিএ পান। ডিএ (WB DA) পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারি কর্মীরা সেখানে পান মাত্র ৩ শতাংশ। এমন পরিসংখ্যান দিয়েই বিরোধী শিবির মুখ্যমন্ত্রীর অনুদানের সিদ্ধান্তকে কাঠগড়ায় তুলছে।
এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার দেনায় জর্জরিত। ৬ লক্ষ কোটি টাকার বিশাল দেনার পাহাড় রাজ্যবাসীর মাথায়। আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারি কর্মচারীরা হাঁটু গেড়ে সরকারের কাছে নিজেদের দাবি (WB DA) জানাচ্ছেন। অন্য দিকে রাজ্য থেকে পুঁজির পলায়ন ঘটছে।”
তিনি আরও বলেন, “যুবক-যুবতীরা পরিযায়ী শ্রমিকের মতো রাজ্য ছাড়ছেন কর্মসংস্থানের অভাবে। খেলা-মেলা-উৎসবের বিরুদ্ধে আমরা নই। কিন্তু এটা কি বাহুল্য নয়? সাড়ে পাঁচ লক্ষ সরকারি পদ শূন্য। ব্যথর্তা ও দুর্নীতির যে কালো ছায়া পশ্চিমবঙ্গকে ক্রমশ গ্রাস করছে, সেই সব দিক থেকে নজর ঘোরাতেই মুখ্যমন্ত্রী এ সব নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে বাঁচতে চাইছেন।’’
Written by Mukta Barai.
দুর্গা পুজোয় স্কুল ও অফিস ছুটি নিয়ে নতুন ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর।