উচ্চ আদালতে ডিএ মামলায় আজই রাজ্য সরকারি কর্মীদের কেভিয়েট দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু।
রায় বহাল থাকার পর থেকেই প্রত্যেক রাজ্য সরকারি কর্মীরাই চিন্তিত ছিল এই মামলার রায় নিয়ে। আজকে সেই রিভিউ পিটিশনের রায় ঘোষণা করল ডিভিশন বেঞ্চ। রায়ে হাসি ফুটেছে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মুখে। কারণ বিভিন্ন জায়গায় তথা স্যাট হোক বা কোলকাতা হাইকোর্ট, এই নিয়ে একবার-দুবার নয়, তিন তিন বার রাজ্য সরকারের রিভিউ পিটিশন যে গুরুত্বহীন,তা প্রমাণিত হল।
যে তিন বার খারিজ হল রাজ্যের আপিল সেই তারিখ গুলি হল- ২৬.০৭.২০১৯ এবং ৩১.০৮.২০২০. এই দুটি তারিখে রিভিউ পিটিশন খারিজ হয়। এরপর আবার কোলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য রিভিউ পিটিশন দাখিল করে গত ২০.০৮.২০২২ তারিখে। অবশেষে আজ ২২.০৯.২০২২ তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট সেই রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দিল। কোলকাতা হাইকোর্ট চত্তরে সরকারি কর্মীরা আজ আবারও মেতেছে খুশির জোয়ারে।
তবে রাজ্য সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানিয়েছেন যে, উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। সেই ব্যাপারে রাজ্য সরকারি কর্মীরা আজই পদক্ষেপ নিয়ে রাখছেন ডিএ নিয়ে। তারা উচ্চ আদালতে কেভিয়েট দাখিল করে রাখার কাজ শুরু করে দিচ্ছেন। ফলে আইনি ভাবে বেশ ভালো প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছেন রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনগুলি।
রাজ্য সকারের একজনের বক্তব্য, যে হাইকোর্টের রায় মানছে না সরকার। বারংবার এই রায়কে উপেক্ষা করছে রাজ্য সরকার। এটি সরকারের সুপরিকল্পিত একটি চাল বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আদালতের রায় সুচিন্তিত এবং সুনির্দিষ্ট। এই রায় রাজ্য সরকারি কর্মচারী আন্দোলনের এক বিশাল জয় বলেই মন্তব্য তার। সরকার এতদিন ডিএ দিয়ে আসছিল। হঠাৎ করে এই নিয়ম পাল্টাতে পারে না, যেখানে প্রত্যেকটি রাজ্য তার সরকারি কর্মীদের নির্দিষ্ট AICPI Index মেনেই ডিএ দিয়ে থাকে। রাজ্যের অবশ্যই এই আইনের রায় মেনে নেওয়া উচিত।
রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী জানান, আজকেই আবার উচ্চ আদালতে কেভিয়েট দাখিল করবে রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠন গুলি। কারণ, রাজ্য ইঙ্গিত করেছে যে তারা উচ্চ আদালতে আপিল জানাবেন। অন্যদিকে জোড়া মামলা হিসেবে আদালতের এই বকেয়া ডিএ মামলার রায় অবমাননার কন্টেম্পট মামলাটিও আজকে আদালতে ওঠার কথা ছিল।
কিন্তু একটি কর্মী সংগঠন কনটেম্পট মামলার ক্ষেত্রে একটু ভুল করায় মামলাটি আজ ওঠে নি। সেই কর্মী সংগঠন আগামী সোমবারের মধ্যে ডিএ সংক্রান্ত কনটেম্পট মামলাটি পুনরায় করে ফেলবে। ডিএ যদি বাকি না থাকে তাহলে আদালত কি এই গুরুত্বপূর্ণ রায় ছেলেখেলা করে দিচ্ছে?- বক্তব্য শ্রী মলয় মুখোপাধ্যায় এর। তিনি পূর্ণ বিশ্বাসী যে উচ্চ আদালতেও তারা এমন করেই লড়াই করবেন নিজেদের মৌলিক অধিকারের দাবিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
আগামী ৯ই নভেম্বর রায় দান হবে কনটেম্পট মামলার। ৭ নভেম্বর তারিখের আগে রাজ্যকে হলফনামা জমা দেবার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
তাদের বক্তব্য অনুসারে, অন্যান্য রাজ্যের মতো AICPI Index মেনে ডিএ না দিয়ে খেলা, মেলা তে মেতেছে রাজ্য। এই নিয়ে আদালতে মোট ৬ বারের রায় গেল রাজ্য সরকারি কর্মীদের পক্ষে। রাজ্য সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য ডিএ আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য। পুজোর আগেই এই রায় রাজ্যকে বড় ধাক্কা দিল। আজ রায়দানের পর আনন্দে তোলাপাড় কোলকাতা হাইকোর্ট চত্বর। কর্মীরা আদালতের রায়ে বেশ খুশি।
আজ আদালত থেকে মাননীয় ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে যে, তাদের পূর্বের রায় বহাল এবং বলবৎ থাকবে। রাস্তার আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নে মলয় বাবুর বক্তব্য, আদালতে প্রক্রিয়া চলাকালীন রাস্তার আন্দোলনে যাওয়া যায় না। কারণ এতে রাজ্য সরকার হয়তো কর্মীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ আনতে পারেন। এতে একটা ইঙ্গিত মিলেছে যে, আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ মিটে গেলে তারা এই পথে গেলেও যেতে পারেন।
বারংবারের মতো রাজ্যের তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হল আজও। রাজ্যের পুজো প্যান্ডেলে অনুদান দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের কোন রকম বিরোধ নেই। তবে তাদের দাবি, ন্যায্য দাবি না মিটিয়ে অনুদান, খেলা, মেলার দিকে বেশি উৎসাহ রাজ্যের। এদিকে রাজ্যের মাথায় প্রায় ৬ লক্ষ কোটির দেনা। সম্প্রতি জানা গেছে, গত ৬ মাসে রাজ্য সরকার প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে রাজ্য।
রাতারাতি ডিএ মামলার সিদ্ধান্ত। কিভাবে 31% ডিএ? আদালতের রায়, আজই। জানতে ক্লিক করুন এখুনি!
আবার রাজ্য সরকার অনেক জায়গায় দাবি করে বলেন যে আগের থেকে রাজ্যের আয় অনেকাংশে বেড়েছে। রাজ্য বলেছিল যে, আর কোন ডিএ বাকি নেই। তাদের দেওয়া তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হল মহামান্য আদালতে। সব মিলিয়ে ৬ বার এটা প্রমাণিত হল যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ মৌলিক এবং সম্পূর্ণ আইন সঙ্গত অধিকার। এবারে কনটেম্পট মামলায় যে আবার রাজ্য সরকার ধাক্কা খাবে সেটাও আজকের রায়ে অনেকটাই পরিষ্কার বলে ধারণা তৈরী হয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মনে।
কারণ, রাজ্য ইতিমধ্যেই আদালতের রায় অবমাননা করে ফেলেছে। কারণ, আজকে রাজ্যের দেওয়া রিভিউ পিটিশনও খারিজ করে দিলো মহামান্য হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। ফলে এই আদালতের রায় অবমাননার কি রায় শোনায় কোলকাতা হাইকোর্ট সেই দিকেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছে রাজ্য সরকারি কর্মীরা। প্রতিবেদন ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর বাকিদের জানার সুযোগ করে দিন। প্রতিবেদন পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
Written by Mukta Barai.