বকেয়া ডিএ (DA Agitation) এর দাবীতে অনশনের পর, এবার পূর্ণ দিবস কর্ম বিরতির ডাক।
রাজ্যজুড়ে এখন একটাই আওয়াজ Dearness Allowance মেটাতেই হবে রাজ্য সরকারকে যার জেরে কলকাতায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে DA Agitation বা ডিএ আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচী। বকেয়া ডিএ এর দাবিতে আওয়াজ তুলেছেন কারা? রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ যে সংগঠন তৈরি করেছেন সেই যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে আন্দোলনের এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
আর শুধু এখানেই তারা থেমে থাকেন নি। পরবর্তী কর্মসূচি ধাপে ধাপে ঘোষণা করা হয়েছে মঞ্চের তরফে। দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা বকেয়া DA পাওয়ার লক্ষ্যে আন্দোলন করছেন। যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে ইতিমধ্যেই শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান বিক্ষোভ চলছে। সরকারি কর্মচারী সংগঠনের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীরা ৩৮% হারে ডিএ পেয়ে থাকেন। সেখানে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা মাত্র ৩ শতাংশ ডিএ পান। ফলে ফারাকটা ৩৫ শতাংশ। আর তাই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের এখন একটাই লক্ষ্য, বকেয়া ডিএ মেটানোর দাবিতে DA Agitation এর মাধ্যমে রাজ্য সরকারের উপরে চাপ তৈরি করা।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন Panchayat Election রয়েছে। তার আগে সরকারের উপরে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের এই চাপ তৈরি করাকে অনেকেই রাজনৈতিক কৌশল বলেও মনে করছেন। কিছুদিন আগেই রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, শহীদ মিনার চত্বরে যারা DA Agitation, অবস্থান বিক্ষোভ করছেন, তারা মূলত সিপিআইএমের কর্মী এবং সমর্থক। সরকারি কর্মচারী সেই অর্থে কেউ নেই। সরকার ঠিকভাবেই চলছে। সময় মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। ফলে এটাও স্পষ্ট হচ্ছে মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, এর পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি থাকতে পারে।
গতকাল রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের পশ্চিম মেদিনীপুরে নয়া ভবনের শিলান্যাস অনুষ্ঠানেও বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে অর্থনৈতিক অবরোধ করছে। ১ লক্ষ ১৮ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ১০০ দিনের কাজের ৬১৫০ কোটি টাকা বকেয়া। সেই দিকটা সম্বন্ধে সরকারি কর্মচারীদের উপলব্ধি করা উচিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাউকে বঞ্চিত করবেন না। সরকার ডিএ নিয়ে সংবেদনশীল কিন্তু আর্থিক অবস্থাটা বুঝতে হবে।
এদিকে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া DA দেওয়ার নির্দেশ দিলেও হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে SLP দাখিল করে সরকার। সেই মামলার শুনানি হবে আগামী ১৫ই মার্চ। এতদিন আদালতে আইনি লড়াই চলছিল। কিন্তু ঠিক পঞ্চায়েত ভোটের আগেই রাস্তায় নেমে DA Agitation আন্দোলন তৈরি করতে দেখা যাচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের একাংশকে।
যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের DA-র ফারাক নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। অবিলম্বে রাজ্য সরকার যদি বকেয়া ডিএ না মেটায়, তাহলে মঞ্চের তরফে আরো বৃহৎ আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর ধীরে ধীরে অবস্থান মঞ্চের পরিধি বাড়ছে, একে একে প্রচুর কর্মী যোগ দিচ্ছেন সেই মঞ্চে। যার জেরে বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে আরও জোরালো আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রসঙ্গত এই আন্দোলনে সামীল হয়েছেন উস্থি (UUPTWA) প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন। যারা ২৯ দিনের অনশন করে সরকারের কাছ থেকে গ্রেড পে বৃদ্ধির অর্ডার আদায় করেছিলো।
আরও পড়ুন, সন্তানের নাম করে মাত্র 150 টাকা করে জমিয়ে পান 7 লক্ষ টাকা, এই সুযোগ আর পাবেন না।
এবার ইতিমধ্যেই একদিকে যেমন শহীদ মিনার চত্বরে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে DA Agitation অবস্থান বিক্ষোভ চলছে, ঠিক অপরদিকে আগামী দিনের আন্দোলনের মাত্রা তীব্র করার লক্ষ্যে কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।
৭ ফেব্রুয়ারি, রাজ্যজুড়ে সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের দাবি ব্যাজ পরে দাবি দিবস পালন করার ডাক দেওয়া হয়েছে। ঐদিন বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের শহীদ মিনার চত্বরে তাদের অবস্থান-বিক্ষোভেও ডাকা হয়েছে।
১০ ফেব্রুয়ারি, শহীদ মিনারে নাগরিক কনভেনশনের আয়োজন করা হয়েছে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে। সেখানে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, রাজ্যজুড়ে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল সহ সমস্ত সরকারি দপ্তরে পেন ডাউন DA Agitation Pen Down এবং পূর্ণ দিবস কর্ম বিরতি বা গণছুটির DA Agitation One Day Strike ডাক দেওয়া হয়েছে। তবে জরুরী পরিষেবা এর থেকে বাদ রাখা হয়েছে।
যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে শিক্ষক কিঙ্কর অধিকারী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে, ৭ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হল। তার মধ্যে যদি রাজ্য সরকার DA প্রসঙ্গে কোনো বার্তা না দেয়, তাহলে ৮ই ফেব্রুয়ারি মঞ্চের তরফে DA Agitation আরো বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, আন্দোলন করার অধিকার সকলের রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের প্রচুর পাওনা বাকি রয়েছে। সেই দিকটা সরকারি কর্মচারীদের ও ভেবে দেখতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তারাও এই বিষয়টি তুলে ধরুক। যারা আন্দোলন করছে তারাও কেন্দ্রের কাছে বকেয়া মেটানোর জন্য বলুক।
এটা ঠিক, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের উপরে একটা অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরীর চেষ্টা চালাচ্ছে। যে অভিযোগ তৃণমূল করছে, সেই অভিযোগ ইতিমধ্যেই রাজ্যবাসীর চোখের সামনেও পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের বহু প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ আটকে রেখেছে।
মাত্র 200 টাকা জমিয়ে প্রতিমাসে পান 3000 টাকা, সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য।
একশো দিনের কাছ থেকে শুরু করে আবাস যোজনা সহ বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের যে বরাদ্দ টাকা, তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এটা রাজ্য সরকারের উপরে কৌশলে চাপ তৈরীর চেষ্টা বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ রাজ্যজুড়ে বহু সামাজিক প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আর সেই প্রকল্প থেকে রাজ্যের সাধারণ, নিম্ন মধ্যবিত্ত, গরীব শ্রেণীর মানুষ যথেষ্ট উপকৃত হয়েছেন। এক ধাক্কায় কোষাগার থেকে যদি বহু পরিমান টাকা বেরিয়ে যায়, তাহলে সেই সমস্ত প্রকল্পের উপরেও প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব পড়তে পারে। যার ফলে ভুগতে হতে পারে রাজ্যের সাধারণ মানুষকে। এই বিষয়টিও একাধিকবার তুলে ধরা হয়েছে।
এবার থেকে কোন রেশন কার্ডে কি কি সামগ্রী পাবেন, তালিকা দেখুন।
এবার দেখার বিষয়, রাস্তায় নেমে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের বকেয়া DA পাওয়ার লক্ষ্যে এই DA Agitation আন্দোলন কর্মসূচি কতটা ফলপ্রসূ হয়, সেদিকেই নজর সকলের।
Written by Rajib Ghosh.
রাজ্যের মানুষকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করতে হবে নাহলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। মানুষ যেন মনে না করে এই রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভাবছে না।