প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক সর্বত্রই শিক্ষক নিয়োগের চরম দুর্নীতির জেরে রাজ্যের বহু শিক্ষকদের চাকরী বাতিল তথা শিক্ষাক্ষেত্র টালমাটাল হয়ে আছে। প্রতিনিয়ত কয়েকশো শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের চাকরী বাতিল করে চলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এরই মধ্যে শিক্ষকদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিল ব্যাংকও। ব্যাঙ্কের তরফে লোন স্যাংশন করা হচ্ছে না শিক্ষকদের, এমনটাই অভিযোগ উঠছে।
চাকরী বাতিলের জেরে লোন বন্ধঃ
রাজ্যের দক্ষিণ বালুরঘাটের একটি সমবায় ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠে এসেছে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বহু শিক্ষকের চাকরী বাতিল হয়েছে। এর পরেই ওই সমবায় ব্যাঙ্কটি শিক্ষকদের লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো’ নীতি অধিগ্রহণ করেছে বলে খবর। বালুরঘাটের কিছু শিক্ষক এই ব্যাংক থেকে লোন নেবার জন্য আবেদন করেছিলেন। কেউ হোম লোন, কেউ বা ব্যক্তিগত লোনের জন্য আবেদন করেছিলেন।
সমস্ত নথিপত্র জমা দেওয়ার সময় ব্যাঙ্ক তা মঞ্জুর করলেও পরবর্তীতে আর লোন দেওয়া হয়নি, তা আটকে রাখা হয়েছে বলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ওই শিক্ষকরা। মূলত 2014 এবং 2017 সালে যারা চাকরি পেয়েছেন, তাদের লোনই মঞ্জুর করা হয়নি। যার জেরে, শিক্ষকদের আক্ষেপ, গুটি কয়েক শিক্ষকদের জন্য সারা রাজ্যের শিক্ষকদের অপমান হচ্ছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও লোন পাচ্ছেন না, আর সামাজিক সম্মান ও নষ্ট হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে, দক্ষিণ দিনাজপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের সিইও তনুজ কুমার সরকার সংবাদমাধ্যমে বলেন, “চাকরী বাতিলের জেরে শিক্ষকদের লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি নেওয়া হয়েছে এটা সঠিক৷ কারণ এমন অনেক শিক্ষক রয়েছেন যাদের ঋণ দেওয়ার পর চাকরী বাতিল হয়ে গিয়েছে। যার ফলে সেই ঋণের টাকা ব্যাঙ্ক পাচ্ছে না৷ তাই যেই সব সালে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেই সব সালে চাকরিতে যোগ দেওয়া শিক্ষকরা লোনের আবেদন করলেই ঋণ দেওয়া হচ্ছে না, আগে পুরোটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷”
ব্যাঙ্কের এমন আচরণের বিরোধিতা করে তীব্র ধিক্কার জানিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি তথা শিক্ষক সংগঠন। এই প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক শিক্ষা কর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল জানান, সরকারের দুর্নীতির কারনে গোটা শিক্ষক জাতির সম্মানের হানি হয়েছে। শুধু ব্যাংক ই নয়, ট্রেনে বাসে, কিম্বা সমাজের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষকদের আড়চোখে দেখা হচ্ছে। প্রতি নিয়ত শিক্ষকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে যে তারা কত সালে চাকরী পেয়েছেন।
আরও পড়ুন, বাতিল হওয়া পদে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ শুরু হলো, পর্ষদের বিজ্ঞপ্তি।
এই প্রসঙ্গে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বাম শিক্ষক সংগঠন নেতা শঙ্কর ঘোষ জানান, “শিক্ষকদের হয়রানি না করে যাতে ব্যাঙ্ক লোন পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। অপরদিকে, দুর্নীতিতে যারা চাকরি পেয়েছে, তার দায়ও সরকারের। ফলে সরকারকেই এই দায় নিতে হবে।”
আরও পড়ুন, আর হেয়ালি নয়, প্যান আধার লিংক না করলে এই 22 টি সরকারী সুবিধা পাবেন না।
রাজ্যের শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শিক্ষক মহা সঙ্ঘের সদস্য শুভেন্দু বক্সী এই প্রসঙ্গে বলেন, ”নিয়োগ দুর্নীতিতে যাদের নাম জড়িত, তাদের তো চাকরি যাচ্ছেই, কিন্তু যারা বৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন এই ঘটনায় তাদেরও প্রশ্ন চিহ্নের সামনে পড়তে হয়েছে। বৈধ শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে সামাজিক হয়রানি হতে হচ্ছে।”
Written by Antara Banerjee.