Advertisement
ডিএ ধর্মঘট (DA Strike DA Agitation)
Advertisement

কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় বসে ডিএ ধর্মঘট আন্দোলন করছেন। আর তাই টিভি ক্যামেরাগুলো তাদের প্রতিনিয়ত সমানে দেখিয়ে যাচ্ছে। তার কারণ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন। অন্তত এই রাস্তায় বসে আন্দোলন করার ফলে টিভিতে তো মুখ দেখানো যাচ্ছে। কেউ না দেখুক, শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা দেখছে, বলছে, সরকারি চাকরির সাথে সাথে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে জামাইয়ের মুখটাও টিভি চ্যানেলে দেখা যাচ্ছে। আর এই কথাটাই এদিন স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরলেন রাজ্যের মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

Advertisement

ডিএ ধর্মঘটের প্রভাবঃ

এটা ঠিক, সরকারি চাকরি করছেন, মাসের শেষে বেতন নিচ্ছেন, আবার কেন্দ্রীয় হারে DA দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় বসে ডিএ ধর্মঘট আন্দোলন করছেন। কাজ কর্মের বালাই নেই, আর তার উপরে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের দাবি মত ডিএ মেটাতে হবে, সেই দাবিতেই রাজ্যজুড়ে সরকারি দপ্তরে ডিএ ধর্মঘটের (DA Strike) ডাক দিয়েছিলেন। যার ফলে বারে বারে টিভি চ্যানেলগুলো (TV Channels) ওই ধরনা মঞ্চের ছবি তুলে ধরছে সারাদিনভর।

Advertisement

Breaking News:
এদিকে বকেয়া ডিএ আন্দোলনরত অন্যতম কর্মী অনশনরত থাকাকালীন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন আজ। অবস্থার অবনতি হওয়ায় দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় কে সল্টলেকের হার্ট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। যৌথ মঞ্চ সুত্রে জানা যাচ্ছে, তিনি সাত দিন ধরে অনশনরত।

Advertisement

এবার বকেয়া ডিএ এর দাবিতে শুক্রবার রাজ্যের স্কুল-কলেজ সহ সরকারি দপ্তরে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে যে ডিএ ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল, তা কি আদৌ সফল হয়েছে? প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে। কারণ একদিকে ডিএ ধর্মঘটের পক্ষে যে সংগঠন তাদের তরফে বলা হচ্ছে, ধর্মঘট পুরোপুরি সফল। প্রশাসন স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবার তৃণমূল সমর্থিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের তরফে জানানো হয়েছে, ধর্মঘটের বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। সমস্ত সরকারি দপ্তরে উপস্থিতির হার ছিল যথেষ্টই বেশি। ফলে একদল বলছে, ডিএ ধর্মঘট সফল। আরেকদল বলছে, ধর্মঘট বিফল। এই দাবি, পাল্টা দাবির মধ্যে আসল চিত্রটা কি?

একটু খোঁজখবর করলেই দেখা যাচ্ছে, শুক্রবার ধর্মঘটের দিন নবান্ন (Nabanna), বিকাশ ভবন (Bikash Bhawan), বিধাননগর এর বেশ কিছু সরকারি কার্যালয় থেকে শুরু করে প্রতিটি জেলার সরকারি দপ্তরে উপস্থিতির হার ছিল যথেষ্টই। সেক্ষেত্রে কিছু জায়গায় ধর্মঘটের আংশিক প্রভাব দেখা গিয়েছে। মহাকরণ, খাদ্য ভবন, ক্রেতা সুরক্ষা ভবন সহ জেলার কিছু কিছু জায়গায় ধর্মঘটের বিক্ষিপ্ত প্রভাব পড়তে দেখা গিয়েছে। আর এদিন এই ধর্মঘট প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, সব জায়গায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ লোক কাজ করেছেন। যে ডিএ ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল, সেটাও বিফল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কর্মদিবস নষ্টে বিশ্বাস করে না। তাই কর্মদিবস নষ্ট হয়নি।

EK24 News

এর সঙ্গেই অবশ্য ফিরহাদ ডিএ ধর্মঘট প্রসঙ্গে আরও বলেন, যদি আপনারা টিভিতে দেখানো বন্ধ করে দিতেন, তাহলে আরও যারা অনশন করছেন, তারাও ওই ক্যাম্প উঠিয়ে দিতেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমস্ত নেতারা প্রতিদিন সেখানে যাচ্ছে। আর আপনারাও নিয়মিত টিভিতে দেখিয়ে যাচ্ছেন। আর যাই হোক, কেউ না দেখুক, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা দেখছেন। দেখে বলছেন, দেখো, জামাইকে দেখা যাচ্ছে। কত ভিড় হচ্ছে। পাশাপাশি, ফিরহাদ রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, সামাজিক প্রকল্প বন্ধ করে DA দিতে পারব না। নিশ্চিতভাবে ৩ শতাংশ যে DA দেওয়া হচ্ছে, সেটা সাধ্যের মধ্যে। যেদিন সম্ভব হবে, সেদিন আরো দেওয়া হবে।

Advertisement

বকেয়া ডি এর আন্দোলনের মধ্যেই রাজ্য বাজেট পেশের সময় অর্থ দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেন। মার্চ মাস থেকেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা সেই ৩ শতাংশ মিলিয়ে মোট ৬% DA পাচ্ছেন। কিন্তু খুশি হতে পারেননি তারা। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় হারে Dearness Allowance দিতে হবে। আর তাই হুঁশিয়ারি দিয়ে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, লাগাতার এই আন্দোলন কর্মসূচি চলবে। শুক্রবার যে একদিনের ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল যৌথ মঞ্চের তরফে, সেখানে রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় এই ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে বিক্ষিপ্ত গণ্ডগোলের খবর পাওয়া গিয়েছে।

মুর্শিদাবাদ এবং নদীয়া জেলায় ডি এর দাবিতে এই ধর্মঘটে মিশ্র সাড়া পাওয়া গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে ধর্মঘট রুখতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বেলা ১০টা থেকে জেলা শাসকের অফিস, প্রশাসনিক ভবন, স্কুল বোর্ড এবং প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সামনে ধর্মঘটের সমর্থনে সরকারি কর্মীরা পিকেটিং শুরু করেন। বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শকের দপ্তরে ধর্মঘটীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। হাওড়া জেলার বিভিন্ন স্কুলে কিছু শিক্ষক কাজে যোগ দেননি। তবে কলকাতা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা স্কুলগুলিতে ৮০ শতাংশ উপস্থিতির হার ছিল।

DA ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। নবান্নের তরফে এদিন পরপর ৪বার প্রতিটি জেলা থেকে নির্দিষ্ট অ্যাটেনডেন্স ফরম্যাট (Attendance Format) অনুযায়ী হাজিরার রিপোর্ট আলাদা আলাদা ইমেল এর মাধ্যমে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। যে সরকারি আধিকারিক এবং কর্মচারী অনুপস্থিত থাকবেন, তার নাম এবং ডেজিগনেশন সহ বিস্তারিত তথ্য আজকের মধ্যেই নবান্নে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবারের এই ধর্মঘটে কো-অর্ডিনেশন কমিটিও সামিল হয়েছে।

Advertisement

বাড়িতে বসেই অনলাইনে মাত্র 5 মিনিটে APL কার্ড থেকে করে নিন BPL কার্ড, জানুন কিভাবে?

DA ধর্মঘট নিয়ে যৌথ মঞ্চের তরফে তাপস চক্রবর্তী বলেন, ধর্মঘটের সর্বাত্মক প্রভাব পড়েছে। সিপিআইএমের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির তরফে বলা হয়েছে, কর্মচারী বন্ধুরা রাজ্য প্রশাসনকে অচল করে দিয়েছেন। সারা রাজ্যেই ডিএ ধর্মঘট সফল।
তৃণমূল প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তী জানান, ধর্মঘটের বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। রাজ্যের সরকারি অফিসগুলোতে, নবান্নে অন্যদিনের তুলনায় হাজিরা যথেষ্টই বেশি। ধর্মঘটীরা তো রাজ্যের প্রধান সচিবালয়কেই অচল করতে পারলেন না।

সপ্তাহের কোনদিন লটারি কাটলে, জেতার চান্স সবচেয়ে বেশি, জানলে অবাক হবেন।

জানা গিয়েছে, বিকাশ ভবন, জলসম্পদ ভবনের মতো সল্টলেকে যে সমস্ত সরকারি অফিস রয়েছে, সেই সমস্ত জায়গায় উপস্থিতির হার অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল। ফলে দিনের শেষে দেখা গেল, একদলের দাবি, ধর্মঘট সফল। আরেক দলের দাবি, ধর্মঘট পুরোপুরি ব্যর্থ। দুই তরফের মধ্যে দাবির লড়াই রয়ে গেল। তবে স্বাভাবিকভাবে দেখতে গেলে, অন্যান্য দিনের মতোই সমস্ত জায়গাতেই, সরকারি অফিসগুলোতে কর্মচারীদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে।
Written by Rajib Ghosh.

Advertisement
Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement