বছরের শুরুতেই সরকারি আধিকারিক এবং রাজ্য সরকারি কর্মীরা সরকারি ছুটির ক্যালেন্ডার এর দিকে নজর দেন। কারণ দীর্ঘ অফিসের কাজের ফাঁকে যদি একটা লম্বা ছুটি পাওয়া যায়, তাহলে সেই ছুটিতেই বিভিন্ন পরিকল্পনা করে ফেলতে পারেন তারা। একটানা ছুটি পাওয়া গেলে কাছে পিঠে কোথাও ছোটখাটো ভ্রমণের প্ল্যান (Holiday Tour Plan) করে ফেলা যায়। তবে সেটা যদি আগে থাকতে জানা যায়, তাহলে ট্রেন, বাস বুকিং থেকে শুরু করে হোটেল বুকিং সহ আনুষঙ্গিক যা প্রয়োজনীয় কাজ থাকে, সেগুলি সঠিক সময়ে সেরে ফেলা সম্ভব হয়।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য ছুটি ঘোষণাঃ
রাজ্য সরকার এর আগেও রাজ্য সরকারি কর্মীদের কাজের ফাঁকে যথেষ্টই অবসর দেওয়ার জন্য লম্বা ছুটির ঘোষণা করেছে। সমস্ত ধর্মাবলম্বীদের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয় সরকারের তরফে। কখনো দেখা গিয়েছে, কোনো সপ্তাহে দুইদিন ছুটি, আবার একদিন বা দুইদিন পরে ফের আরেকটি ছুটি, সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার সেই জায়গায় একসঙ্গে সেই ছুটিকে একটি প্যাকেজ বানিয়ে ফেলেছে। আর সেই হলিডে প্যাকেজ (Holiday Package) যখন রাজ্য সরকারি কর্মীরা হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছেন, তখনই তারা আনন্দে আত্মহারা।
সরকারি চাকরি করার সুবাদে যখন তখন মনে করলেই কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করে ফেলা যায়। আর্থিক সমস্যার ব্যাপারটা সেই অর্থে থাকে না। ফলত রাজ্য সরকারের কাছ থেকে সেই ছুটি আশাও করেন সরকারী কর্মচারীরা। যতই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারি কর্মীদের কর্মসংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হোক না কেন, যতই ছুটির বহর বাড়িয়ে দিয়ে সরকার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চাপা দিতে চাইছে বলে আক্রমণ করা হোক না কেন, সরকারি কর্মচারীরা কিন্তু সরকারের এই ছুটির দিকেই তাকিয়ে থাকেন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ছুটি ঘোষণা করার সময় অনেকবার বলতে শোনা যায়, সরকারি কর্মীরা যাতে ছুটি উপভোগ করতে পারেন, সেই দিকে নজর দিয়েই ছুটির তালিকা তৈরি করে দিলেন। আর যেই না ছুটির তালিকা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী, অমনি পোয়াবারো রাজ্য সরকারি কর্মীদের। শুরু হয়ে গেল ব্যাগ গোছানোর পালা। কাছে পিঠে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে, তার একটু সুলুকসন্ধান শুরু করে দেন তারা।
এবারও ঠিক সেই একই পদ্ধতিতে দেখা গেল এপ্রিল মাসের শুরুতেই টানা ৩ দিন ছুটি পেতে চলেছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। কিন্তু কিভাবে? শনিবার এবং রবিবার এমনিতেই সাপ্তাহিক ছুটি। তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হল সোমবার। মহাবীর জয়ন্তী ছিল ৪ এপ্রিল, মঙ্গলবার। সেই ছুটিটাকেই দিন বদল করে দিল নবান্ন। শনিবার, রবিবার এবং তার সঙ্গে সোমবার মহাবীর জয়ন্তী উপলক্ষে ছুটি বদলে দিয়ে একসঙ্গে টানা তিন দিন ছুটি দেওয়া হল রাজ্য সরকারি কর্মীদের।
পহেলা এপ্রিল থেকে স্কুল বন্ধ হবে, নোটিশ দিয়েই বিতর্কের মুখে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল শিক্ষা দপ্তর।
নবান্নর তরফে নির্দেশিকা জারি করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ছিল মহাবীর জয়ন্তীর ছুটি। সেক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটি শনিবার, রবিবারের পরে সোমবার কর্মচারীদের অফিসে আসতে হতো। তারপরে ফের আবার মঙ্গলবার ছুটি দিয়ে দিতে হতো। সেই কারণে একটানা যাতে সরকারি কর্মীরা এই ছুটি উপভোগ করতে পারেন, তাই শনিবার, রবিবারের সঙ্গে দিন বদলে সোমবার, মহাবীর জয়ন্তীর ছুটি দিয়ে দেওয়া হল রাজ্য সরকারের তরফে। আর এর ফলে একটানা ৩ দিন ছুটি পেতে চলেছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা।
সরকারি কর্মীদের PF একাউন্টে সুদের হার বেড়ে কত হচ্ছে? বিশদে জানুন।
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ কেন্দ্রীয় হারে ডিএ মেটানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও লাগাতার অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তারা। তবে DAর দাবিতে আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারীদের একাংশ রাজ্য সরকার ছুটি দিয়ে তাদের সেই দাবিকে চাপা দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে । কিন্তু সেই অভিযোগ করা হলেও ছুটি ঘোষণা করতেই দেখা যায়, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। কারণ টানা সরকারি কাজের ফাঁকে যে তারা একটানা একটা ছুটি পাচ্ছেন। ফলে সেই সুযোগ কখনোই হাতছাড়া করতে চান না তারা।
Written by Rajib Ghosh.