বকেয়া ডিএ নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী,কি বার্তা দিলেন, জেনে নিন। চাকরি করবেন রাজ্য সরকারের, আর ডিএ চাইবেন কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের মত, সেটা কখনোই হয় না। কেন্দ্র এবং রাজ্যের বেতন কাঠামো সম্পূর্ণ আলাদা। ফলে কেন্দ্রের হারে DA চাইলে সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বকেয়া ডিএ প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের অবস্থান ফের একবার তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যের বকেয়া ডিএ ও নিয়োগ দিরনিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যঃ
এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার বকেয়া ডিএ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন। বহু প্রকল্পের কেন্দ্রীয় বরাদ্দের টাকা পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়া হচ্ছে না, লাগাতার বঞ্চনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এই বিষয়টি এদিনও তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী। আলিপুর জজ কোর্টে ঋষি অরবিন্দের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক বিচারপতির সাম্প্রতিক চাকরি বাতিলের রায় প্রসঙ্গে মানবিক হওয়ার বার্তা দেন। মমতা বলেন, চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কাড়বার ক্ষমতা রয়েছে। যারা দোষী, অন্যায় করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। বিচারপতিদের সম্মান জানাই। কিন্তু যারা এই ঘটনার শিকার হয়েছে, তাদের জন্য মানবিক হওয়া প্রয়োজন। চাকরি চলে গেলে তারা খাবে কি?
যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, সেটার সংশোধন করার প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্য সরকারকে কোনো নির্দেশ দিলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করতেও পারে সরকার, সেই বিষয়টিও খোলসা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) আর তারপরেই আলিপুর আদালতের ওই অনুষ্ঠানেই বকেয়া ডিএ প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি যদি DA দিই, ভালবেসে দেব। কাজ করবেন রাজ্য সরকারের হয়ে, আর কেন্দ্রীয় হারে DA চাইবেন সেটা হয় না।
কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষক আর রাজ্য সরকারের শিক্ষকের বেতনক্রম (Salary Structure) সম্পূর্ণ আলাদা। কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারের পরিকাঠামো একেবারেই আলাদা। ষষ্ঠ পে কমিশনের (6th Pay Commission) পুরোটাই দেওয়া হয়েছে। শুধু এটা পেলাম না, এটা দিতে হবে, ওটা পেলাম না, সেটা দিতে হবে, এই দাবি চালানো হচ্ছে। রাজ্যজুড়ে এতগুলো প্রকল্প চলছে, একটা সরকার আর কত কি করতে পারে?
মিড ডে মিলে চরম দুর্নীতি, 50Kg এর বস্তায় 46Kg চাল! স্কুল শিক্ষকেরা প্রতেক বস্তা ওজন করছেন
এরপরেই বিগত সিপিআইএম জমানার সময়কার বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তার কথায়, আগের সিপিআইএম জমানায় দেখেছি, সঠিক সময়ে শিক্ষকরা বেতন পেতেন না। সঠিক সময়ে পেনশন দেওয়া হতো না। সরকারি বহু দপ্তরের কর্মচারীদের ৩ মাস, ৪ মাস পরে বেতন হতো। সেই জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন শিক্ষক, সরকারি কর্মচারীরা প্রতি মাসের ১ তারিখে নিয়মিত বেতন পান। অবসর নিয়েছেন যারা তারা সঠিক সময়ে পেনশন পান। সিপিআইএম জমানার এত ধার থাকা সত্ত্বেও সরকারি কর্মচারীদের সঠিক সময়ে বেতন, পেনশন দেওয়া হচ্ছে। এই মানবিক সরকারকে কিছু বলতে হবে না।
বকেয়া ডিএ নিয়ে লাগাতার আন্দোলন (DA Movement) চালিয়ে যাচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ। দিন কয়েক আগেই রাজ্য জুড়ে সরকারি দপ্তরে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল তারা। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ মেটানোর দাবিতে একের পর এক লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে মঞ্চের তরফে। বকেয়া DA মামলা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ২১ মার্চ শুনানি হওয়ার কথা। তবে তার আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সরকারি কর্মচারী মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সরকারি কর্মীদের ধর্মঘটের পর আবার নতুন সিদ্ধান্ত, লাগাতার চলবে এবারে! বিস্তারিত দেখুন।
সরকারি কর্মচারীদের অনেকেই মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রী হয়তো এবার তাদের দাবি অনুযায়ী DA দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যদিও সেরকম কোনো কিছুই বলেননি তিনি। এর আগে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, সিপিআইএম ৩৪ বছরে সম্পূর্ণ হারে DA দেয়নি। ষষ্ঠ পে কমিশনের অনুযায়ী ৯৯ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ মোট ১০৫% DA দেওয়া হয়েছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে সরকারি কর্মচারী যারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তারা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। রাজ্যজুড়ে একাধিক জনমুখী প্রকল্প চালাচ্ছে রাজ্য সরকার।
ফলে চাইলেই দাবি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় হারে DA দেওয়া যে সম্ভব নয়, সেই বিষয়টি একাধিকবার রাজ্য সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা রয়েছে, সেই বিষয়টিও মুখ্যমন্ত্রী এদিনের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। ফলে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, রাজ্য সরকারের পরিকাঠামোয় থেকে চাকরি করে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ এর দাবি করা যায় না। তবুও তিনি জানিয়েছেন, যদি DA দেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেটা ভালোবেসেই দেবেন। জোর করে, হুঁশিয়ারি দিয়ে, আন্দোলন চালিয়ে যেভাবে সরকারি কর্মচারীদের একাংশ ডিএ মেটানোর দাবি জানাচ্ছেন, সেটা মেনে নেওয়া সম্ভবপর নয়।
যদিও এর মধ্যেই রাজ্য বাজেটে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৩ শতাংশ DA ঘোষণা করে মোট ৬ শতাংশ DA দেওয়া হচ্ছে। মার্চ মাস থেকেই সরকারি কর্মচারীদের জন্য সেই হারে DA লাগু হয়ে গিয়েছে। তারপরেও সরকারি কর্মচারীদের একাংশ খুশি হতে পারেনি। এবার আলিপুর কোর্টের অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে বকেয়া ডি এ প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন, এর আগে যে মনোভাব নিয়ে কড়া ভাষায় সরকারী কর্মীদের বার্তা দিয়েছিলেন, এদিনের এই বিবৃতিতে কিছুটা হলেও নমনীয় মনে হয়েছে। এবার সুপ্রিম কোর্টের ডিএ মামলার শুনানিতে কি হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
Written by Rajib Ghosh.