সরকারি দপ্তরের কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সেই আন্দোলনের মঞ্চ থেকেই লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করে চলেছেন। মূল দাবি একটাই, কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মেটাতে হবে। আর এর মধ্যেই ফের ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। না, পশ্চিমবঙ্গ সরকার নয়। বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য আসামে সরকারি কর্মীদের জন্য আসামের সরকার এই মহার্ঘ ভাতার বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে।
4% DA ঘোষণা
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নিজের টুইটার থেকে জানিয়ে দিয়েছেন, আসামের সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি করা হলো। ১লা বৈশাখের আগে ১লা এপ্রিলে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় সেই রাজ্যের সমস্ত সরকারি কর্মচারীরা আনন্দে আত্মহারা। ওদিকে আবার কেন্দ্রীয় সরকার কেন্দ্রের সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধি করেছে। আর তার কিছুদিন পরেই আসাম সরকারের তরফে DA বৃদ্ধির ঘোষণায় সেই রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা উচ্ছ্বাসে ভাসছেন।
বাংলার পাশাপাশি বেশকিছু রাজ্যের সরকারি কর্মীদের সম্প্রতি DA এর যে পরিমাণ সেই দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে DA এর পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের DA বৃদ্ধির ঘোষণার পরে। তাছাড়াও অন্যান্য কিছু রাজ্যেও সরকারি কর্মচারীরা বর্ধিত হারেই DA পাচ্ছেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের হারে DA দেওয়া হচ্ছে না। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতেও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের হারে ডিএ পাচ্ছেন না রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা।
ত্রিপুরায় সরকারি কর্মচারীরা ২০ শতাংশ হারে DA পাচ্ছেন। আসামে ৩৮ শতাংশ হারে এতদিন DA পাচ্ছিলেন সরকারই কর্মচারীরা। এবার ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করার ঘোষণা করা হয়েছে। এই একইভাবে ওড়িশাতেও ৩৮ শতাংশ হারেই DA পাচ্ছিলেন সরকারী কর্মীরা। সম্প্রতি ৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বিহারে রাজ্য সরকারি কর্মীরা ৩৪ শতাংশ হারে ডিএ পাচ্ছেন। ছত্তিশগড়ের রাজ্য সরকারি কর্মীরা ৩৩ শতাংশ হারে ডিএ পাচ্ছেন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বিজেপি শাসিত যে রাজ্যগুলিতে বেশ কিছুটা বেশি পরিমাণে DA পাচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা, বাংলার তুলনায় সেইসব রাজ্যের পরিধিও ছোট।
কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারীদের জন্য ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করার পরেই বেশ কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যের সরকারি কর্মীদের জন্য ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের জন্য সম্প্রতি রাজ্য বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ৩ শতাংশ DA বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে। সেখানে এই মার্চ মাস থেকেই ৬ শতাংশ হারে DA পাচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। তবে এই হারে DA ঘোষণা করার পরে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের দাবি, কেন্দ্রীয় হারে DA দিতে হবে।
Primary TET 2016 পুরো প্যানেল বাতিলের সম্ভাবনা, বেআইনি ভাবে নিযুক্ত 15000 শিক্ষক কে চিহ্নিত।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রের হারে DA দেওয়া সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের বেতন কাঠামো আলাদা। এই মুহূর্তে বকেয়া ডিএ মামলা সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ১৫ই মার্চ তারিখে সেখানে শুনানি হতে পারে। আর এর মধ্যেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ আগামী ৬ এপ্রিল সারা রাজ্যে ফের কর্ম বিরতির ডাক দিয়েছে।
শহীদ মিনার চত্বরে ধর্না, বিক্ষোভ চালাচ্ছে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ।
একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণা করে রাজ্য সরকারকে চাপে ফেলার লক্ষ্যে পদক্ষেপ করছে তারা। এরমধ্যেই ডিজিটাল স্ট্রাইকের ঘোষনা করা হয়েছে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে। যৌথ মঞ্চের তরফে যে একদিনের ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল, সেখানে অনুপস্থিতির কারণে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই কড়া শাস্তিমূলক পদক্ষেপের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। তবে যৌথ মঞ্চের তরফে জানা গিয়েছে, আগামী ১০ই এপ্রিল দিল্লির যন্তর মন্তরে বকেয়া ডিএ মেটানোর দাবিতে ধর্না অবস্থান করতে চলেছে তারা।
ডিএ আন্দোলনের মাঝেই সরকারি কর্মীদের জন্য নতুন নির্দেশিকা, নবান্নের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের তুলনায় DA পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে ৩৬ শতাংশে। কলকাতা হাইকোর্টের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে সরকারি কর্মীদের ডিএ মেটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরে রাজ্য সরকার আর্থিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে পাল্টা আবেদন করে। তবুও হাইকোর্টের তরফে একই নির্দেশ বহাল রাখা হয়। তারপরেই রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে SLP দাখিল করে। এখনো পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শুরু হয়নি। তবে এর মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য আসামের সরকারি কর্মীদের জন্য ৪% DA বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে আসাম সরকার।
Written by Rajib Ghosh.