বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance) আদায়ে, রাজ্য সরকারকে চাপে ফেলার নয়া কৌশল! লাগাতার ধর্মঘটের পথেই যাচ্ছেন ডিএ আন্দোলনকারীরা? কি জানা যাচ্ছে?
বিক্ষিপ্ত আন্দোলন, আর কর্মবিরতি করে চাপে ঠিকমত ফেলা যাচ্ছেনা রাজ্য সরকারকে। একের পর এক অনেক কিছুই তো করা হলো, কোনো কিছুতেই যে আর কাজ হচ্ছে না। হ্যাঁ, এরকমটাই ভাবনা চিন্তা করছেন বকেয়া ডিএ নিয়ে আন্দোলন করা রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের সদস্যরাও.
দীর্ঘদিন ধরে সেই যে কলকাতার রাস্তায় ধরনা বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন, সেভাবেই বসে রয়েছেন। বকেয়া Dearness Allowance মেটানোর দাবিতে সেখানে বসেই লাগাতার একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কখনো কর্মবিরতি, কখনো একদিনের ধর্মঘট (DA Strike) শুধু তাই নয়, যৌথ মঞ্চের বেশ কিছু সদস্য ইতিমধ্যে অনশনও করেছেন। তারপরে আরো একধাপ এগিয়ে ১৮ ই মার্চ থেকে ডিজিটাল স্ট্রাইকের (Digital Strike) কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
বকেয়া ডিএ ইস্যুতে নতুন সিদ্ধান্তঃ
যেখানে সরকারের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া অফিস টাইম এর পরে নিজের ফোন, কম্পিউটার বা ডেটা ব্যবহার করে কোনো ধরনের সরকারি কাজকর্মে তারা অংশ নেবেন না। করবেন না কোনো অনলাইন মিটিং । সরকারি অফিসের নির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ (Govt. Whatsapp Group) ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন তারা। আর এভাবেই সরকারকে আরো এক নতুন কায়দায় চাপে ফেলার কৌশল নিতে চলেছে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ। কারন এখন অধিকানশ দপ্তরের কাজ অনলাইনে হয়। যৌথ মঞ্চের দাবী, তারা যদি অফিস টাইমের বাইরে লগিন না করেন, কিম্বা ডিজিটার ধরমগট করেন তবে ২৪ ঘন্টার পরিষেবা ব্যাহত হবে।
বর্তমানে বকেয়া ডিএ মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন রয়েছে। সেখানে আগামী ২১ শে মার্চ শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে কর্মচারীদের বকেয়া DA মিটিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। রাজ্য সরকারের তরফে হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করে জানানো হয়, কোষাগারের আর্থিক পরিস্থিতিসহ একাধিক বিষয়। কিন্তু তারপরেও হাইকোর্ট তার একই রায় বহাল রাখে। তারপরেই রাজ্য সরকারের তরফে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন (Special Leave Petition) দাখিল করা হয়। সেই বকেয়া ডিএ মামলার শুনানি এখনো শুরু হয়নি।
আর একদিকে যখন আইনি লড়াই চলছে, ঠিক সেই সময় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ মেটানোর দাবিতে একেবারে রাস্তায় নেমে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছেন। যত দিন যাচ্ছে, ততই তারা নিজেদের কর্মসূচির মাত্রা আরও তীব্র করতে চাইছেন। সরকারকে একেবারে চাপে ফেলে নিজেদের দাবি পূরণের আদায়ের লক্ষ্যে তারা এইভাবে কর্মসূচির মাত্রা বাড়াচ্ছেন। আর এর মধ্যেই যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের একাংশ সরকারকে চাপে ফেলার লক্ষ্যে আরো বৃহৎ মাত্রায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিতে চাইছেন।
তাদের বক্তব্য, একেবারে টানা ১৪ দিনের ধর্মঘটের (14 days Strike) সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। যদি একটানা ১৪ দিন ধর্মঘট করা হয়, তাহলেই রাজ্য সরকার যথেষ্ট চাপে পড়তে পারে। আর তারপরেই তাদের দাবি কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেবে। তাহলে কি আগামী দিনে ১৪ দিনের টানা ধর্মঘটে শামিল হতে চলেছে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ?
এই প্রশ্নের জবাবে এক সংবাদমাধ্যমে সংগ্রামী মঞ্চের আহ্বায়ক জানিয়েছেন, ভাবনাচিন্তা চলছে। সমস্ত সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী দিনে একটানা ১৪ দিনের ধর্মঘট করা হবে নাকি কর্মবিরতিতে যাওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বকেয়া ডিএ নিয়ে আন্দোলনের মধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্য বাজেটে ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা মোট ৬ শতাংশ DA পাচ্ছেন। কিন্তু DA আন্দোলনকারী সরকারি কর্মচারীদের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা সপ্তম বেতন কমিশনের (7th Pay Commission) আওতায় ৩৮% হারে ডিএ পান। তাদেরকেও কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ প্রদান করতে হবে। আর সেই দাবি যতক্ষণ না রাজ্য সরকার মেনে নিচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ প্রদানসহ একাধিক ইস্যুতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে কলকাতার রাস্তায় ধরনা চলছে। পাশাপাশি অন্যান্য বিক্ষোভ আন্দোলনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তবুও এখনো পর্যন্ত রাজ্য সরকারকে সেই ভাবে চাপে ফেলা যায়নি বলেই সংগ্রামী মঞ্চের একাংশের দাবি, এবার একটানা ১৪ দিনের ধর্মঘট করে রাজ্য সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল নেওয়া যেতে পারে। যাতে রাজ্য সরকার তাদের কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ মেটানোর দাবি মেনে নেয়। ইতিমধ্যেই DA আন্দোলনকারীরা একদিনের ধর্মঘট (Strike) করেছিলেন। সেই ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে নবান্নের তরফে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশিকা জানানো হয়। আর সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী এর মধ্যেই ধর্মঘটের দিন অনুপস্থিত রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের শোকজ নোটিশ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
যদি যথাযোগ্য কারণ দর্শাতে না পারেন কোনো সরকারি কর্মচারী, তাহলে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করবে নবান্ন। সেখানে যেমন একদিনের বেতন কেটে নেওয়া হবে, আবার চাকরি জীবন থেকে একদিনের ছেদ পড়বে। তার সঙ্গে পেনশন, গ্র্যাচুইটি সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাতেও প্রভাব পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর এই প্রসঙ্গে ডিএ আন্দোলনকারী সরকারি কর্মচারীদের একাংশের বক্তব্য, তাদের ধর্মঘট করার অধিকার রয়েছে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বকেয়া ডিএ আন্দোলনকারীদের অনশন প্রত্যাহারের কথা বলেছেন।
টাকা দ্বিগুন করতে চান? তাহলে পোষ্ট অফিসের এই প্রকল্পে টাকা রাখুন।
যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের এক প্রতিনিধি দল রাজ্যপাল আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করেন। তারপরেও যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়নি। যদিও তারা মনে করছেন, এইভাবে আন্দোলন চালিয়ে সরকারকে চাপে ফেলা যেতে পারে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে একদিকে রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন, পাশাপাশি লাগাতার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করেছেন। তারপরেও কোনো কাজ হচ্ছে না দেখে অন্য ধরনের ভাবনা-চিন্তা করতে চলেছেন তারা।
ভোট বয়কটঃ
রাজ্যের সমস্ত ভোট নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধায়নে রাজ্য সরকারী কর্মী ও শিক্ষক শিক্ষিকারা সম্পন্ন করে থাকেন। আর সেই সুযোগ নিতে চাইছে সংগ্রামী মঞ্চ। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া তারা ভোটের ডিউটি করবেন না। আর রাজ্য নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী সমস্ত বুথে দেওয়া কার্যত অসম্ভব। তাই সেই সুযোগ নিয়ে নবান্নের উপর আরও চাপ বাড়াতে চাইছে। আর ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনে এই নিয়ে স্নারকলিপি জমা করেছে। আপডেট আসছে।
Written by Rajib Ghosh.
সাবধান, রিটায়ার লোকদের কথায় উত্তেজিত হলে চলবে না, ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিজে সিদ্ধান্ত নিন।